দেশে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে গরম বাড়ছে। বিশেষ করে চৈত্রের এ সপ্তাহের কয়েকটা দিন রাজধানীতে বেশ গরম পড়ছে। গরমের সঙ্গে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এবার শিশুদের চেয়ে বয়স্ক রোগীর ভিড় বেশি। মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা মেডিকেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্যার সলিমুল্লাহ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের তুলনায় বড়রা বাড়ির বাইরে বেশি যাচ্ছেন। গ্রীষ্মের দাবদাহে ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন সময় অনিরাপদ পানি পান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। এতে ফুড পয়জনিং থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া করোনার কারণে মানুষের মধ্যে বারবার হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা ছিল। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষ তা ভুলতে বসছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষরা অনেক সময় হাত ধোয়া ছাড়াই খাবার খাচ্ছেন। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে অনিরাপদ পানি ও বরফ মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের শরবত, নোংরা কাগজ-পলিথিনে মোড়ানো মুখরোচক খাদ্য খাচ্ছেন। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানিতে থাকা এন্টেরো টক্সিক ই-কোলাই, সালমোনেলা, সিজেলা ও কলেরার মতো ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া, কলেরা, রোটাইভাইরাস, সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কলেরা হাসপাতালে (আইসিডিডিআর,বি) শনিবার রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, চৈত্রের প্রথম ১২? দিন এ হাসপাতালে ক্রমেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। রোগীদের জন্য নির্ধারিত বিছানা সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বাইরে দুটি তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত অন্য বছরগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল। কিন্তু এবার বিপরীত চিত্র-১৮ বছরের ওপরের বয়সি রোগীই হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। শিশুরাও ভর্তি হচ্ছে, তবে বয়স্কদের তুলনায় কম। ডা. বাহারুল আলম জানান, আগের বছরগুলোতে তাদের হাসপাতালে গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হতো। কিন্তু এবারের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ১৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কোনোদিনও এক হাজারের নিচে নামেনি। ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪১ জনে। ২০ মার্চ রোগীর সংখ্যা হয় ১ হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ ও ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন। ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬ জন এবং ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮ জন এবং সর্বশেষ শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬৯৫ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজধানীর কয়েকটি এলাকা থেকেই ঘুরেফিরে বেশি ডায়রিয়া রোগী আসছে। এর মধ্যে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শনির আখড়া, মিরপুর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, উত্তরা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এসব রোগীর অধিকাংশই কলেরা আক্রান্ত। রাজধানীর বাইরে সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও রোগী আসছে। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে এবার ডায়রিয়া আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী আসছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক ও পুরুষ। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়ামাতুজ্জামান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্তদের জন্য ১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি কর্নার খোলা হয়েছে। এছাড়া পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। তবে এবার রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা দেওয়ায় আরও ৩০টি শয্যার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ডায়রিয়া নিয়ে এখন পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক ও পুরুষ রোগী। অপরদিকে আইসিডিডিআর,বির পাশাপাশি আগারগাঁওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে ছোট-বড় সবাইকে বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। ফুটানো পানি পান করতে হবে।
হোম | যোগাযোগ | গোপনীয়তার নীতি | শর্তাবলী
All Rights Reserved By PM LLC © 2020 To Present - Development By Rumel Ahmed