পরপর দুই বছর—২০১৬ ও ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে কাশ্মীরে বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছিল। ২০১৬ সালে আন্দোলন হয়েছিল জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের তরুণ সেনাধ্যক্ষ বুরহান ওয়ানির বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুতে। ২০১৭ সালে হিজবুলের পরবর্তী কমান্ডার সবজার বাটের একইভাবে মৃত্যুর কারণে আন্দোলন হয়েছিল। এই দুই বছরে কাশ্মীরে থেকে আমি দেখেছি, কীভাবে স্কুল–কলেজের ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। সেই আন্দোলন সামাল দিতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়েছিল ভারতের ত্রিস্তরীয় (সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ) নিরাপত্তাব্যবস্থাকে। দুই বছরেই ছররা বন্দুক (শটগান) বা শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর বড় একটা অংশ আহত হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে।এরপরেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের কায়দাকানুন পাল্টে ফেলে ভারত। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর দেখেছি, সামান্য উত্তেজনা দেখা দিলেই স্থানীয় ছেলেদের একটা অংশকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, গুলি চালানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনকারী আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, মানবাধিকারকর্মীদের বড় অংশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পত্রপত্রিকায় সরকারবিরোধী খবর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া দিল্লি ও কাশ্মীরের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করত যেসব রাজনৈতিক দল (প্রধানত ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি) এবং নেতা–নেত্রী, তাঁদের প্রায় সবাইকেই গ্রেপ্তার করে ভালো হোটেলে বা তাঁদের বাসায় রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে রাজ্যটিকে যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলেন, তখনো মনে করা হয়েছিল ২০১৬ সালের মতোই মানুষ রাস্তায় নামবে। কিন্তু তা হয়নি। ফলে গত পাঁচ বছরে ভারত সরকার যে কাশ্মীরকে প্রায় বিনা রক্তপাতে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন হলো, এর পরের ধাপ কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বুঝে নেওয়া জরুরি যে অন্য রাজ্যের মতো কাশ্মীরের সমস্যা ও বিবাদ, শুধু কাশ্মীরেরই নয়। এর সঙ্গে গোটা ভারতের রাজনীতি জড়িয়ে আছে। হয়তো পুরো উপমহাদেশের রাজনীতিও। কাশ্মীরে ভারতের সরকার কী অবস্থান নিচ্ছে, এর ওপর অন্য রাজ্যে, বিশেষত উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ক্ষমতাসীন দলের জেতা-হারা অনেকটাই নির্ভর করছে। কাশ্মীরে কড়া অবস্থান নিলে ক্ষমতাসীন দলের অন্য রাজ্যে নম্বর বাড়ে। পাকিস্তানেও এই রাজনীতি চলে। কাশ্মীরে ভারতবিরোধী অবস্থান না নিলে ইসলামাবাদে ক্ষমতায় থাকা মুশকিল। কাশ্মীর নিয়ে কড়া অবস্থান তাই দুই দেশেই জরুরি। বর্তমানে পাকিস্তানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। অর্থনৈতিকভাবেও পাকিস্তান বিপর্যস্ত। তাই কাশ্মীরের দিকে তারা খুব একটা নজর দিতে পারছে না বলে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই মনে করেন। তবে ভারতের অবস্থা ভিন্ন।