স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু। শ্বশুরবাড়ি থেকে কখনো টাকা-পয়সা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের হত্যা করেছেন বলে জানান তিনি।
জহুরুল ইসলাম বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। যশোরের অভয়নগর থানার এসআই উত্তম কুমার এসব তথ্য জানান।
এদিকে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাসের শ্বশুর শেখ মুজিবর রহমান জানান, পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথীর সঙ্গে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মশিউর বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিয়ে হয়। তারপর তাদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জহুরুল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তিনি বিথী ও তার দুই মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতেন।
মেয়ে ও দুই নাতনির সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১ সালের ২২ জুন তাকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন। এরপর আরো টাকা চাইলে বিথী তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) ও সাফিয়া আক্তারকে (২) নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে জহুরুল তাদের বাড়িতে যান। বিথী ও দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।
এ ঘটনার পর শুক্রবার মধ্যরাতে শেখ মুজিবর রহমান বাদী হয়ে জহুরুলের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু পুলিশের কাছে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে কখনো টাকা-পয়সা পাইনি। স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি। হত্যার আগে আমার স্ত্রীকে মারধরও করেছি। নির্জন ওই কলাবাগানের সামনে পৌঁছালে আমার মনে হত্যার পরিকল্পনা আসে। প্রথমে স্ত্রীকে পরে বড় মেয়ে ও শেষে ছোট মেয়েকে হত্যা করি। এরপর ওই দিন বিকেলে আমি নিজে স্থানীয় বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে আত্মসমর্পণ করি। আমি একজন খুনি। আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভয়নগর থানার এসআই উত্তম কুমার জানান, গ্রেফতার জহুরুলকে শনিবার যশোর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ওসি একেএম শামীম হাসান জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বিথীর বাবা বাদী হয়ে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শনিবার সকালে তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে।