বরিশালের যাত্রী রুমি। বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌঁছান শুক্রবার সকালে। মোটরসাইকেলে চড়ে স্ত্রী ও ৫ বছরের শিশু সন্তান নিয়ে ঈদ করতে গেছেন গ্রামের বাড়ি। ঈদআনন্দ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুক্রবার রওনা করেন বাড়ি থেকে।
বাংলাবাজার ঘাটে এসে দেখলেন শুধু মোটরসাইকেল পার করতে একটিমাত্র ঘাট ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাবাজার ঘাটের ৪ নম্বর ঘাটটি। সকাল ১০টার কিছু পরে গেলেন ঘাটের পন্টুনে।গিয়ে দেখেন ফেরি সংকট মারাত্মক। দিনে মাত্র ৩টি ফেরি দিয়ে এপারে ভিড়ল। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ফেরিতে উঠতে পারলেন নাশুধু রুমিই নয়। এমন হাজারও বাইকাররা সড়ক পথে হাওয়া লাগিয়ে আসলেও অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে। মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার ছোট-মাঝারি পরিবহনসহ মটরসাইকেল পার করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ফলে হাজারো মটরবাইক নিয়ে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে আটকে পড়ে দুর্ভোগ স্বীকার করেছে বাইকাররা।
রোদে ঘামে এক কথায় অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই রাজধানীতে ছুঁটছেন তারা।
আর বিআইডব্লিউটিসির দাবি, বিশেষ ব্যবস্থায় একটি ঘাট বাইকারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফেরির সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।
শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাবাজার নৌরুটের চার নাম্বার পল্টুনে দাঁড়িয়েছে আছে অন্তত শতাধিক মোটরসাইকেল। আর পল্টুন থেকে প্রায় ছয় শ’ মিটার পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের উপরে বাইক দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে পল্টুনের উপরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘাম ঝড়াচ্ছেন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর পর একটি রো রো ছোট ফেরি ঘাটে আসছে। তাতে দেড় থেকে পৌঁনে দুই শ’ মোটরসাইকেল জায়গা করে নিচ্ছে। বাকিরা আবার অপেক্ষা করছে। এভাবে অনেকেই সকাল ৮টায় এসে দুপুর ৪টার দিকেও ফেরিতে উঠতে পারেনি।
এভাবেই রোদ ঘামে আর ঘাটের ময়লা আবর্জনার দুগন্ধ সাথে নিয়ে কর্মস্থলে ছুঁটছেন। সারাদিনই ঘাটে আটকে প্রচণ্ড রোদে ঘাটের মধ্যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা একটা ফেরিঘাটে এসে পৌঁছালে ফেরিতে উঠতে জীবন-মরণ যুদ্ধ শুরু করে বাইকাররা। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রায় ৫ হাজার বাইক ফেরি পার হয়েছে ধারণা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বরিশালের আগৈলঝড়া থেকে আসা জাফরুল বলেন, ঈদে বাইক নিয়ে আসছিলাম আনন্দে করে ঢাকায় ফিরব। কিন্তু ঘাটের যে অসহনীয় দুর্ভোগ তাতে পুরো আনন্দই মাটি হয়ে গেলো। এতো কষ্ট আমি কখনোই পাইনি। সকাল ৮টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত ফেরিতে উঠতে পারি নাই। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর পর একটি ছোট ফেরি আসে, তার মধ্যে তিন-চার মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকার থাকে। একশ বাইকও যেতে পারে না।
উজ্জ্বল হোসেন নামে আরেক বাইকার বলেন, ‘ফেরি কর্তৃপক্ষের সিস্টেমের ভুলের কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা অন্য ঘাট থেকে মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকার নিয়ে চার নম্বর ঘাটে আসে। এতে দুই ঘাটে লোড-আনলোড হতে অন্তত এক ঘন্টা সময় বেশি লাগে। ফলে পারাপার হতেও বেশি সময় লাগে। যদি এক ঘাটের জন্যে একটি ফেরি মোটরবাইকারদের জন্যে রাখতো, তাহলে এতো দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
বিআইডউব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে কর্মস্থলমুখো যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলীয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোট ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ।
লোডমার্ক অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী পারাপার করছে। আর স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এ রুটে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, কেটাইপ ফেরি কুঞ্জলতা, ক্যামেলিয়াসহ ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিএ।
ফেরিগুলোতে সাধারন যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন, কাঁচামালবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। তবে সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় দুই শতাধিক যানবাহনের লাইন সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে দীর্ঘসময় ঘাটে আটকে থেকে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘এ রুটে ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী, জরুরি গাড়ি ও কাঁচামালবাহি গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। কিছু গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী সকল গাড়িই পারাপার করছি। আর চার নম্বর ঘাট দিয়ে শুধুমাত্র মোটরবাইক পার করছি। প্রতিটি বাইকের জন্যে ৭০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যদি কেউ বেশি ভাড়া চায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করছি।’