একজন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, একজন শিক্ষক। দুজনই চাকরি করতেন নিজ নিজ ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানে। করোনাকালে কারও বেতন কমে, কারও চাকরি চলে যায়। অভাব-অনটন কিংবা বেঁচে থাকার তাগিদে তারা যুক্ত হন অপরাধ জগতে। ক্রমে হয়ে ওঠেন পেশাদার ছিনতাইকারী। বাইক ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা ছিনতাই হয়ে ওঠে তাদের কাছে সহজ শিকার। এই দুই পেশা ছাড়াও চিকিৎসক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও ছিনতাইয়ের মতো সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার রেকর্ড নথিভুক্ত হয়েছে পুলিশের কাছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইদানীং ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন ইঞ্জিনিয়ারিং ও শিক্ষকতার মতো পেশার লোকজনও। পেশাজীবী থেকে এসব ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন পেশাদার ছিনতাইকারী। রাজধানীর ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। করোনাকালে বেতন কমে যাওয়াসহ নানান কারণে জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে। এখন তিনি পুরোদস্তুর পেশাদার ছিনতাইকারী।
মাসুদ রানা হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারেও ইংরেজি পড়াতেন। কিন্তু করোনার মধ্যে স্কুল ও কোচিং সেন্টারের চাকরি হারান তিনি। হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে অভাব ও হতাশা। একপর্যায়ে একটি ছিনতাইচক্রে যোগ দেন। বাড্ডা, রামপুরা, খিলক্ষেতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে বেড়ান তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার ১১ লাখ টাকা ও পরে মোহাম্মদপুরে আরেক সরকারি কর্মকর্তার ২৩ লাখ টাকা ছোঁ মেরে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান দুই ছিনতাইকারী। এ দুই ঘটনার পর অভিযানে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এতেই বেরিয়ে আসে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয়। শুধু ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষকই নন, এ তালিকায় রয়েছেন ডাক্তার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
পেশাজীবীদের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রম বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সমাজের প্রথমসারির পেশার যেসব ব্যক্তি ছিনতাইয়ে যুক্ত হয়েছেন তাদের দিয়ে ওইসব পেশায় জড়িত অন্যদের বিচার করা যাবে না। আমরা ব্যতিক্রমী কয়েকটি ঘটনা পেয়েছি। একেকজন একেক কারণে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিশেষ পেশায় যুক্ত হলেই কোনো ব্যক্তি চারিত্রিক বা মানবিক হবেন এমনটি নয়। কারণ আমাদের দেশে মানবিকতা, সামাজিকতা ও সততার শিক্ষা তেমনটা নেই। আবার সব পেশায় সবাই ভালো আছেন তাও নয়। যারা আর্থিকভাবে ভালো নেই তারাই অপরাধ পুঁজি করে বেঁচে থাকতে চান। আবার মাদকাসক্ত ব্যক্তি যে পেশায়ই যান না কেন তিনি ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।