দেশে নৌদুঘর্টনার ৫৬ শতাংশই ঘটে অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বহনের কারণে। সংঘর্ষের কারণে দুর্ঘটনার হার ৯ শতাংশ। চালক বা মানব ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৮ শতাংশ। অন্যান্য কারণে বাকি ২৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।
শনিবার চাঁদপুরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনায় সভায় নৌপরিবহন অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে।
ওই আলোচনায় সভায় বক্তারা, নৌদুর্ঘটনা কমাতে প্রশিক্ষিত নাবিক দিয়ে নৌযান পরিচালনা, অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধ, নাব্য সংকট দূর করা ও ওভারলোডিং বন্ধ করার তাগিদ দেন।
নৌনিরাপত্তা সপ্তাহের সমাপনী উপলক্ষ্যে ঢাকার বাইরে প্রথম এ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর।
এদিন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনায় কবলিত নৌযান উদ্ধারের বার্ষিক মহড়ার আয়োজন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এ মহড়ায় বিআইডব্লিউটিএ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা অংশ নেন।
দুটি অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌসচিব মো. মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ও দেশ কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাহফুজ হামিদ প্রমুখ।
মুন্সিগঞ্জে উদ্ধার মহড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপথের গুরুত্ব কমবে না। আরও বাড়বে। এ সেতুর সুফল ভোগ করবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। এ দুটি সমুদ্র বন্দর আরও গতিশীল হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব বড় বড় নৌযান চলাচল করছে, সেগুলো দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হলে তা উদ্ধারের সক্ষমতা আমাদের নেই। এজন্য বড় আকারের উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী চাঁদপুরে নৌনিরাপত্তা সপ্তাহের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ওই অনুষ্ঠানে বক্তাদের বড় অংশ চাঁদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত ড্রেজার ও নৌযানেরর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
তাদের এ বক্তব্যের পর প্রতিমন্ত্রী সেখানে বলেন, চাঁদপুরে আন্তর্জাতিক মানের নদীবন্দর স্থাপন করা হবে। এ বন্দর থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।
নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষযে তিনি বলেন, আমাদের বালু দরকার; তবে অপরিকল্পিতভাবে নয়। অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকারীরা যত শক্তিশালী হোক না, যে দলেরই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। দেশে চলাচলকারী নৌযানের শুমারি করা হবে। অবৈধ নৌযানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
প্রশিক্ষিত নৌযান শ্রমিকদের জাহাজে নিয়োগ দিতে প্রতিমন্ত্রী নৌযান মালিকদের আহ্বান জানান।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞরা যে রুট নির্ধারণ করে দিয়েছিল, কিছু চালক সেই রুটে না চলায় পদ্মা সেতুতে বার বার ফেরি আঘাত করেছিল। এতে আমিসহ নৌ মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন তারা সমালোচনার মুখে পড়েছিলাম। তাই আমি বলব নৌযানে প্রশিক্ষিত ও শিক্ষত শ্রমিকদের নিয়োগ দেন। তারা সকলকে নিরাপদ রাখবে।
এ অনুষ্ঠানের সভাপতি নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দিন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তুলে ধরে বলেন, নৌদুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মানবত্রুটি। চালকেরা প্রশিক্ষিত ও শিক্ষিত হলে এ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
সময় তিনটি নৌদুর্ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব দুর্ঘটনায় ৭৯জন মারা গেছেন। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে শুধুমাত্র নাবিকদের উদাসীনতা ও মানবসৃষ্ট ত্রুটির কারণে।
নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, নৌযান তৈরিতে যে নজরদারি করা হচ্ছে বাস্তবিক অর্থে দক্ষ নাবিক তৈরিতে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী নাবিকদের যোগ্যতা শিথিল করার সুযোগ নেই।এ অনুষ্ঠানে ‘আধুনিক যাত্রীবাহী নৌযান ডিজাইন’ এবং ‘ অভ্যন্তরীণ নৌযান নাবিক প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, নদায়ন’ বিষয়ক দুটি উপস্থাপনা করা হয়।
‘জীবন রক্ষা এবং অগ্নিনির্বাপনকারী সরঞ্জাম ব্যবহার’ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া নৌ নিরাপত্তা-২০২২ উপলক্ষ্যে ‘সুবর্ণতরী’ নামক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
হোম | যোগাযোগ | গোপনীয়তার নীতি | শর্তাবলী
All Rights Reserved By PM LLC © 2020 To Present - Development By Rumel Ahmed